বাগমারায় চা-বিক্রেতার ছেলে রবিনের স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে?

অভাব আর দারিদ্রতা পিছু টানতে পারেনি রবিনকে। শত কষ্টে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছেন আপন শক্তিতে। সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে রবিন হোসেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এই সাফল্য অর্জন করেছে। রবিন হোসেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মাদারীগঞ্জ সাফিক্স প্রি-কিন্ডার গার্টেন থেকে বিজ্ঞান বিভাগ হতে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল।

রবিন উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের হাসনিপুর উত্তরপাড়ার গ্রামের লায়েব আলী এবং রুপালী বেগমের ছেলে। রবিনের পিতা মাদারীগঞ্জ বাজারের চা-বিক্রেতা এবং মা গৃহিনী।

দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে পিতা-মাতার ২য় সন্তান এই রবিন। অভাবের সংসারের কারনে তার বড় ভাই লেখাপড়া ছেড়ে পিতার চা-বিক্রয়ে সহযোগিতা করে আসছে। আর বোনের বয়স হচ্ছে বছর তিনেক। নিজের তেমন কোন জমিজমা নেই। একদিকে সংসারের খরচ  অন্যদিকে সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয় মেটানো। এ যেন সাধ্যের অতিরিক্ত হয়ে উঠেছে।

মাদারীগঞ্জ বাজারের একটি ভাড়া দোকানে চলছে রবিনের পিতার চা-স্টল। চা-বিক্রয়ই একমাত্র উপার্জনের খাত। পরিবারের ৫ সদস্যের সমস্ত ব্যয় মিটানোতেই টানাপোড়ন দেখা দেয়। করোনা ভাইরাসের এই দীর্ঘ সময় চা-স্টল বন্ধ থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছে রবিনের পিতা লায়েব আলী। অন্যদিকে প্রতিমাসে ঘরভাড়া দিতে হয় ১ হাজার ৮শত টাকা। একদিকে সংসারের খরচ অপরদিকে দোকান ঘরভাড়া। সেই সাথে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মেটানো। এতো সব কিছুর মধ্যেও অভাবকে জয় করে এসএসসির ফলাফলে জিপিএ-৫ অর্জণ করেছে রবিন। এসএসসিতে ভালো ফলাফল করলেও আগামীর উচ্চতর শিক্ষা হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

রবিনের স্বপ্নকি স্বপ্নই থেকে যাবে। নাকি বাস্তবের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। চা-বিক্রয় করে সংসার চালানোই যেখানে কষ্টকর সেখানে উচ্চতর লেখাপড়ার খরচ সরবরাহ করবে কি ভাবে এমনই চিন্তায় পড়েছেন মেধাবী রবিনের পিতা। লেখাপড়ার পাশাপাশি অভাবের সংসারে পিতার সাথে চা-বিক্রয়ে সহযোগিতা করে থাকতেন রবিন।

রবিনের ইচ্ছা প্রকৌশলী হওয়া। অভাবের সংসারে সেই স্বপ্নটাকে কতোটা বাস্তবায়ন করতে পারবে সেটা দেখার বিষয়। রবিন জানায় অভাবের সংসার হওয়ায় লেখাপড়া চালিয়ে যেতে একটু কষ্ট হবে। তবে কোন ভাবে সহযোগিতা পেলে স্বপ্নটাকে জয় করা সহজ হবে তার।

রবিন ২০১৭ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (জেএসসি) ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এবারের এসএসসিতেও জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।

রবিনের এই সাফল্যের পেছনে শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর মা-বাবার অনুপ্রেরণা রয়েছে বলে জানা গেছে। লেখাপড়া শেষে প্রকৌশলী হতে চায়, সে জন্য সকলের দোয়া কামনা করেছেন রবিন।

সূত্রঃ banglarkotha.news (Rajshahi)