একজন মোহাম্মদ নাসিমের চলে যাওয়া

মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু বা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি যুগের একজন অন্যতম রাজনীতিকের বিদায়। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদই ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। এই আপাদমস্তক রাজনীতিবিদদের যুগ বাংলাদেশে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

এখন ধীরে ধীরে আসছে পার্ট টাইম রাজনীতিবিদদের যুগ, এর পরে হয়তো আসবে ট্রাম্পের মত শতভাগ ব্যবসায়ী রাজনীতিদের যুগ। তখন মানুষ হিসেব করবে বাংলাদেশের কেনেডিদের আমলে তারা ভালো ছিল, না বাংলাদেশের ট্রাম্পদের আমলে তারা ভালো আছে। 

আমরা যখন ধীরে ধীরে সেই বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি, ঠিক এ সময়ে একজন নাসিমের চলে যাওয়া অনেক দুঃখের। খবর শুনে শুধু একজন আপনজন, বড়ভাই, বন্ধু হিসেবে চোখে পানি আসেনি, চোখে পানি এসেছে ভবিষ্যত বাংলাদেশকে ভেবেও। 

মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে লিখতে গেলে একটা বই লেখা যায়। আর সে বই একেবারে অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। কিন্তু তাঁর মৃত্যু সংবাদ পাবার মিনিট দশেক পরে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে এই লেখা লিখতে বসেছি। তাই কিছুটা খাপছাড়াও হতে পারে এ লেখা। 

কারণ, ঠিক এই মুহূর্তে একজন ঘনিষ্ঠজনকে নিয়ে লেখা যায় না। অনেকে বলতে পারেন, আমরা সাংবাদিক, আমাদের সবকিছুতে নির্মোহ থাকা উচিত। তাদের কথা ঠিক। তবে আমাদের প্রজম্মের জন্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবেগহীন থাকা একটু অসম্ভব।

কারণ, তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ছে পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট, ৩ নভেম্বর এর  হত্যাকাণ্ডের পরে মোহাম্মদ নাসিম যখন ভারতে, তখন একটি প্রতিরোধ যুদ্ধের আশায় তারা ছিলেন। সেই যুদ্ধের নানান সহযোগী তখন বাংলাদেশের ভেতর কাজ করতো। 

সেই সব কাজের মাধ্যমে খবর পেতাম, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম- প্রমুখ কী কষ্টে সেখানে আছেন। আসলে সেটা মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, এস এম ইউসুফ, কাদের সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী , ডা. এস এ মালেক এমনই অনেকের কষ্টই শুধু ছিল না, সেটা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অধ্যায়। সেদিনের এদের কষ্ট, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার কষ্টকে বাদ দিয়ে কখনই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পরিপূর্ণ ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। 

১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিপূর্ণ ইতিহাস লিখতে গেলে অবশ্যই ৭৫ পরবর্তী ভারতে ও লন্ডনে যারা সীমাহীন কষ্টের ভেতর সংগ্রাম করেছেন তাদের ইতিহাস লিখতে হবে।

৭৫ এর ১৫ অগাস্ট এর সন্ধ্যায় যুবলীগের মমতাজউদ্দিনের পল্টনের বাসায় তৎকালীন যে তরুণ নেতারা জড়ো হয়েছিলেন তাদের সংগ্রামের ইতিহাস থেকে শুরু করে এই ভারত ও ইউরোপে যারা সংগ্রাম করেছে তাদের সবার ইতিহাস লিখতে হবে। 

আর সেই পরিপূর্ণ ইতিহাসের ওপর দাঁড়িয়ে একজন মোহাম্মদ নাসিমের চলে যাওয়ার দুঃখ, বেদনা ও ক্ষতি হিসেব করা যাবে। এই সংগ্রামের পথের ভেতর দিয়েই মোহাম্মদ নাসিম আর শুধু জাতীয় চার নেতার একজন ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর ছেলে ছিলেন না, তিনি নিজেই একজন মোহাম্মদ নাসিম হয়ে উঠেছিলেন। আর চলে গেলেন একজন মোহাম্মদ নাসিম হিসেবে। 

বাংলাদেশে ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টের পরে শুধু গণতন্ত্র নয় সিভিল শাসন পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় ১৯৮২ সালের শেষ ও ১৯৮৩ সালের শুরুতে পরিপূর্ণভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট গড়ে ওঠার পরে। এ সময়ে মোহাম্মদ নাসিম তরুণ ও টগবগে নেতা। ১৫ দলীয় জোটের মূল মঞ্চে তিনি ভাষণ দেবার সুযোগ খুব একটা পেতেন না। 

কিন্তু আওয়ামী লীগের জনসভায় তাঁর ও মোহাম্মদ হানিফের বক্তব্যের প্রতি কর্মীদের একটা আলাদা আকর্ষন ছিল। বিশেষ করে এই দুজনের ভরাট গলায় যেন গোটা পল্টন, বায়তুল মোক্কারম চত্তর গমগম করে উঠতো। তখন আওয়ামী লীগে অনেক প্রবীণ নেতা। তাদের ফাঁকেও শুধু মনসুর আলীর ছেলে নয়, নিজস্ব আচরণ ও বক্তৃতার কারণে ধীরে ধীরে মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় রাজনীতির একজন নেতা হিসেবে প্রবেশ শুরু করেন কর্মীদের মন আকর্ষণের মাধ্যমে।

 আর এরশাদ আমলের শেষের দিকে এসে তিনি নিজেকে অনেকখানি জাতীয় রাজনীতির অংশ করে ফেলেন। এই জাতীয় রাজনীতিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার সব থেকে বড় গুণ ছিল কর্মীদেরকে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে সময় দেয়া ও অন্য শ্রেণি-পেশার লোকদের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে ওঠাবসা। 

ওই সময়ে আওয়ামী লীগের যে কোন কর্মসূচীর পরে সাংবাদিক বর্তমানে এমপি শফিকুর রহমান ভাই, আতাউস সামাদ ভাই ও আমি অনেক দিন আওয়ামী লীগ অফিসে যেতাম দুজন লোককে অবশ্যই পাব মনে করে। একজন ফজলুল হক বিএসসি, অপরজন মোহাম্মদ নাসিম। 

আওয়ামী লীগের তখন দুর্দিন। অফিসে একটা দুটো বাল্ব জ্বলতো, সব রুমে ফ্যান নেই। ওই গরমে এবং খানিকটা আলো আঁধারীর ভেতর এই দুজন লোককে অবশ্যই পাওয়া যেত। তাদের কাছ থেকে আমরা আওয়ামী লীগের বা ১৫ দলীয় জোটের রাজনীতির অনেক খবরাখবর পেতাম।

একটা দিনের কথা আজ মনে আসছে খুব বেশি করে। কারণ, মোহাম্মদ নাসিমের বাসায় অনেকদিন খেয়েছি কিন্তু তারপরেও আওয়ামী লীগ অফিসে সেদিনের তার সেই আন্তরিকতা সত্যি ভোলার নয়। আমরা যখন আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকেছি তখন মোহাম্মদ নাসিম দুটো বন রুটি ও একটু চিকেন ফ্রাই নিয়ে কেবল খেতে যাবেন। 

আমাদের দেখে উঠে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে তিনি যে টেবিলে ছিলেন তার পাশে নিয়ে গেলেন। তার পরে নিজে দুটো চেয়ার টেনে আনলেন। এরপরে ওই বনরুটি টুকু নিজে হাতে ছিঁড়ে আমাদের হাতে দিলেন। সবাই মিলে চিকেনটুকু ভাগ করে ওই বন রুটি খাই। বাস্তবে এই ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। 

তবে আওয়ামী লীগ অফিসের কথা মনে হলে ১৯৯১ এ খালেদা জিয়া ক্ষমতা আসার পরে অফিসের ভেতর রাবার বুলেট ছুড়ে শত শত কর্মীর সঙ্গে মোহাম্মদ নাসিমকে আহত করার সেই দৃশ্য মনে পড়ে। সেদিনও আতাউস সামাদ ভাই, শফিকুর রহমান ভাই ও আমি আওয়ামী লীগ অফিসে ছিলাম। 

সেদিন বিএনপির এই অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছিল মতিঝিল থানার ওসি স্বয়ং। যতদুর মনে পড়ে তার নাম ছিল কুদ্দুস। ওই রাবার বুলেটের বৃষ্টির ভেতর আতাউস সামাদ ভাই এগিয়ে গিয়ে তাকে বলেন, আপনার পুলিশ থামান। কী করছেন এটা। মনসুর আলীর ছেলেকে এভাবে মেঝেতে ফেলে পিঠাচ্ছেন আর রাবার বুলেট মারছেন। একি! 

মোহাম্মদ নাসিমের শাদা পাঞ্জাবি রক্তে ভিজে ততক্ষণে লাল হয়ে গেছে। সামাদ ভাইয়ের গায়ে একটা বুলেট লাগায় তার শাদা শার্ট রক্তাক্ত। আমি নিজেও বাদ যাইনি। তবে তখন প্রায় বারোমাসই জিনসের বা কডের জ্যাকেট পরতাম। যে কারণে জিনসের জ্যাকেটের ওপর দিয়ে আমার শরীরে রাবার বুলেট খুব বেশি রক্তপাত ঘটাতে পারেনি। 

সেদিন সেই রক্তাক্ত মোহাম্মদ নাসিম সব কর্মীদের হাসপাতালে পাঠিয়ে তারপরে যতদূর মনে পড়ে উনি এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এক রিকশায় ঢাকা মেডিকেলে যান। এরপরে ১৯৯৬ এর জনতার মঞ্চে মোহাম্মদ নাসিমের আগুন ঝরানো ভাষণ এসব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সিভিল শাসন অর্জনের ইতিহাসের অংশ। 

তবে মোহাম্মদ নাসিমের রাজনীতিতে সব থেকে বড় সাফল্য ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে। ওই সময়ে সত্যি অর্থে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। কারণ, পূর্ব পাকিস্তানের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশের ওই সময়টি জুড়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল থেকে শুরু করে পাবনা রাজশাহী এলাকা অবধি পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও সর্বহারা পার্টির ক্যাডারদের অবৈধ অস্ত্রের একটি রাজত্ব ছিল।

 তারা যখন তখন শ্রেনিশত্রু খেতাব দিয়ে যে কোন বড় কৃষক বা সাধারণ মধ্যবিত্ত এমনিক বাজারের একটু বড় দোকানিকেও হত্যা করা শুরু করেছিল। আর প্রায় রাতে কোন না কোন বাড়িতে ডাকাতি করতো। সর্বোপরি এরা মা বোনদের ইজ্জত নষ্ট করতো ওই এলাকায়। 

মোহাম্মদ নাসিমের আগে কোন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদেরকে দমন করতে পারেননি। দমন করতে পারেননি সামরিক শাসকরাও। কারণ এদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান শুরু হলেই এরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে গিয়ে থাকতো।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের উগ্র বামদের কাছে তাদের এক ধরনের আশ্রয় ছিল। তাছাড়া সীমান্তের ওপার থেকেও তাদের কাছে অস্ত্র শস্ত্র আসতো। মোহাম্মদ নাসিমই প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি রাজনৈতিক উদ্যোগ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করেন। 

তিনি তাদেরকে অস্ত্র সমর্পন করাতে সমর্থ হন। ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হন ওইসব তথাকথিত সশস্ত্র বামদের স্বাভাবিক জীবনে। ওই সময়ে একজন সাংবাদিক হিসেবে ওই এলাকার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি কী পরিমান জনপ্রিয় ছিলেন সেখানে মোহাম্মদ নাসিম।

 সত্যি অর্থে শেখ হাসিনার পরেই ওই এলাকায় সেদিন জনপ্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। তার জনপ্রিয়তা ওই এলাকায় তখন এমন তুঙ্গে পৌঁছেছিল যে, ২০০১ এ যদি সত্যি অবাধ নির্বাচন হতো মোহাম্মদ নাসিমকে ওই এলাকায় ৫টি সিটে নমিনেশান দিলে তিনি সবকয়টি থেকেই পাস করে আসতেন। 

আজ অনেকে দোষ দেন, ২০০১ এ মোহাম্মদ নাসিমের ওই বক্তব্য 'অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেও ক্ষমতা হস্তান্তর নয়' এই সিদ্ধান্তের কারণে আওয়ামী লীগ ২০০১ এ হেরে যায়। আগাম নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জিততো এমনটি বলেন। 

বাস্তবে এ কথা ঠিক নয়। কারণ, ২০০১ সালের এই নীল নকশার নির্বাচন প্রায় এক বছর আগের থেকে বিএনপি ঠিক করতে সমর্থ হয়। সেদিনের সে ষড়যন্ত্রের অনেক কিছু দেখা ও জানার সুযোগ হয়েছিল। ভবিষ্যতে সময় সুযোগ হলে হয়তো সেগুলো লিখবো। 

সাহাবুদ্দিন- লতিফুর রহমানের সেদিনের অনেক কীর্তি-কলাপ নানান সময়ে লিখেছিও। যাহোক, এই আগাম নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জিততো এমন একটা ধারণা সৃষ্টি করাও ছিল বিএনপি-জামায়াত চক্রের একটি কৌশলে। তাদের এই কৌশলে পা দিয়ে একটি প্রগতিশীল পত্রিকাও সেদিন 'শেষ সময়ে যা পাই তাই খাই' বলে আওয়ামী লীগের নেতাদের সেদিন চরিত্র হনন করেছিল। 

তবে এটাই সত্য ২০০১ এ আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিলো বলে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদেরকে নির্বাচনে জোর করে পরাজিত করে। 

এর পরে বিএনপির ২০০১ এর আমলে সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আরেক জাতীয় নেতা ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ সহ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী এমনকি যুবমহিলা লীগের গর্ভবতী মহিলারাও সেদিন কীভাবে রাজপথে পুলিশের হাতে নিগৃহীত হয়েছে সে ইতিহাসও হয়তো আজকের তরুণরা জানে না। 

সেদিন রাজপথে বার বার রক্তাক্ত হয়েছেন মোহাম্মদ নাসিম, সোহেল তাজ তবুও কখনও তারা রাজপথ ছাড়েননি। আর ওই যুব মহিলা লীগের কর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ তাদের কীভাবে নির্যাতন করেছে সেই সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে এক পর্যায়ে আমার মহিলা সহকর্মীর সহায়তা নিতে হয়েছে। শোনা সম্ভব হয়নি নিজ থেকে। কারণ, সেই সমাজে আমরা বেড়ে উঠিনি বা আমাদের সমাজের গঠন ভিন্ন। আমাদের বাঙালির সমাজে মা বোন ভিন্ন সম্মানের আসনে। 

এমনিভাবে একের পর এক ঘটনা লিখতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলা যায় আগে ছাত্র রাজনীতি করলেও তখন তিনি ছিলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে। কিন্তু ১৯৭৫ এর পর থেকে একের পর এক চড়াই উৎরাই পার হয়ে নিজেই হয়েছিলেন জাতীয় রাজনীতির মোহাম্মদ নাসিম। 

তার মৃত্যুর পরে বা তিনি অসুস্থ হবার পরে এক শ্রেণির লোকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা বিভিন্ন খবরের নিচে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তার ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কথা তুলে অনেক কথা লিখছেন। মোহাম্মদ নাসিম কতটুকু দুর্নীতি করেছিলেন তার সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই।

 তবে তার আমলে অন্য অনেক মন্ত্রণালয়ের মত তার মন্ত্রণালয়ে  কেনা-কাটা সহ অনেক কিছু সঠিকভাবে হয়নি। এর জন্যে একজন ব্যক্তি নাসিমকে দোষারোপ করে খুব কি লাভ হবে! আমাদের সামগ্রিক কাঠামো না বদলে কি আসলে আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে পারবো? বঙ্গবন্ধুও এই দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে বাকশাল করেছিলেন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে।

বাংলাদেশকে সত্যি অর্থে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে সামাজিক বিপ্লব করতে হবে হয়তো। তবে তারপরেও আজ আমি মোহাম্মদ নাসিমকে ডিফেন্ড করছি না শুধু বলতে চাই, মোহাম্মদ নাসিম কি কোন 'ভবন' খুলে দুর্নীতি করেছে? 

দুই বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে যাদের পরিবার পরিজনরা জুয়াকে রোজগারের উৎস দেখিয়ে মালয়েশিয়া বা ইংল্যান্ডে রাজার হালে বাস করছেন মোহাম্মদ নাসিম কি তাদের মত কিছু করেছেন? এমনকি যারা বিদেশে ক্যাসিনো হাউজ গড়ে তুলেছে, যারা শেয়ার বাজার শেষ করে বিদেশি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছেন , মোহাম্মদ নাসিম কি সেই পথে গেছেন! 

বরং বলা যায়, ভুল ক্রটি যাই থাকুক জীবনের বড় অংশ তিনি দেশের মানুষের জন্যেই নিবেদন করে গেছেন। তাই তিনি একটি বিশেষ যুগের প্রতিনিধি।  আর ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বাংলাদেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা যদি কোটি টাকা দামের গাড়ি চড়ে তাহলেও এ মাটি সন্তুষ্ঠু হবে কিন্তু রাজাকার বা রাজাকারের সন্তান কোটি টাকার গাড়ি এ মাটিতে চড়লে বাংলা মায়ের মাটি নিঃসন্দেহে ব্যথা পায়।
(সংগ্রহীত)