করোনার ওষুধ হলো মনোবল-আত্মবিশ্বাস-- ব্র্যাক।

"এই কঠিন সময়ও আমি যে চিন্তামুক্ত থাকতে পেরেছি সেজন্য স্ত্রীকেই বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছি। সে বটগাছের ছায়ার মতো পাশে ছিল। একইসঙ্গে সিভিল সার্জনসহ অন্য কর্মকর্তাদের কথাও বলতে হয়। কারণ তারা প্রায় প্রতিদিনই ফোনে আমার খবর নিয়েছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা জিজ্ঞেস করেছেন। সহকর্মীরাও প্রতিদিন খবর নিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। সকলের সহায়তায় সহজেই করোনা থেকে সেরে উঠেছি।"


'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ভয় পাবেন না। সাহস দিয়ে ভয়কে জয় করতে হবে। আমি মনে করি, করোনার গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হলো আত্মবিশ্বাস ও মনোবল'। মুঠোফোনে এ কথা জানালেন ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির করোনাজয়ী স্বাস্থ্যকর্মী আবদুস সালাম (ছদ্মনাম)।

মেহেরপুরের মুজিবনগরে যক্ষ্মা কর্মসূচিতে কর্মরত সালাম গত ২২শে এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর নিজ বাসায় ১৬ দিন আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন। তৃতীয়বার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় মেহেরপুরের জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন গত ৬ই মে তাকে পুরোপুরি সুস্থ ঘোষণা করে।

লক্ষণ দেখে টেস্ট করাই

সালাম বলেন, "হঠাৎ করে গলায় ব্যথা হওয়ার পর সহকর্মীদের কথামতো গত ২১শে এপ্রিল করোনা টেস্ট করাই। এর পরদিন স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয় আমার টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ। এরপর সিভিল সার্জন, ইউএনও-সহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসে আমার বাসা লকডাউন করে দেন। আমার বাসায় যেহেতু আলাদা একটি রুম আছে এবং রুমের সঙ্গে আলাদা বাথরুম আছে, সেজন্য তারা আমাকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে বলেন। আইসোলেশনে কীভাবে থাকতে হবে সেসব বিষয়ে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেন।"

সাহস জোগালেন সিভিল সার্জন ও ইউএনও

"রিপোর্ট পজিটিভ জেনে সিভিল সার্জন ও ইউএনও-সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা যখন ফোন করে বাসায় চলে এলেন, তখন আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, আমার করোনা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের জন্য তখন খুব খারাপ লাগছিল।

সিভিল সার্জন এই অবস্থা দেখে আমাকে সাহস দিয়ে বলেন, আর দশটা অসুখের মতোই এটাও একটা অসুখ। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি বিশ্রাম নেন, পুষ্টিকর খাবার খান এবং নিয়ম মেনে চলেন। তাহলেই সুস্থ হয়ে যাবেন।"

বাসায় আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হলাম

"বাড়ির সেই রুমেই কেটেছে আমার করোনা-কাল। আমার স্ত্রী দরজার সামনে খাবার রেখে দিত। আমি সেখান থেকে খাবার নিয়ে নিতাম। আমার রুমে কেউ ঢুকত না। সারাক্ষণই মাস্ক পরে থাকতাম।

এই কঠিন সময়ও আমি যে চিন্তামুক্ত থাকতে পেরেছি সেজন্য স্ত্রীকেই বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছি। সে বটগাছের ছায়ার মতো পাশে ছিল। একইসঙ্গে সিভিল সার্জনসহ অন্য কর্মকর্তাদের কথাও বলতে হয়। কারণ তারা প্রায় প্রতিদিনই ফোনে আমার খবর নিয়েছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা জিজ্ঞেস করেছেন। সহকর্মীরাও প্রতিদিন খবর নিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। সকলের সহায়তায় সহজেই করোনা থেকে সেরে উঠেছি।"

সালাম আরও বলেন, "তেমন কোনো উপসর্গ ছিল না। তবে হঠাৎ করে গলা ব্যথা শুরু হয়। এজন্য কুসুম গরম পানি, লেবু চা খেয়েছি। লং ও আদা মেশানো গরম পানির ভাপ নিয়েছি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সিযুক্ত খাবার খেয়েছি।"

কীভাবে আক্রান্ত হলাম?

"কীভাবে এই ভাইরাস সংক্রমিত করল, সেটা আমার কাছে একটা বিস্ময়! কেননা অফিসের কাজ করার সময় মাস্ক ব্যবহার করেছি ও গ্লাভস পরেছি। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাতও ধুয়েছি। তবে প্রতি সপ্তাহে একবার করে কাঁচাবাজার গিয়েছি। সেখানে শারীরিক দূরত্বের নীতি ও স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা মেনে চলা হচ্ছিল না। সেখান থেকেই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে।"

মনোবলই বল

সালাম বললেন, "এখন যেভাবে সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে যে কেউই আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না। করোনা প্রতিরোধে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। করোনার সবচেয়ে বড়ো চিকিৎসা হলো মনোবল। আশপাশের মানুষের কথায় কান না দিয়ে চিকিৎসকের নির্দেশনা মতো চলতে হবে। আর 'আমাকে ভালো হতেই হবে'-এই মনোবল থাকলে করোনা থেকে দ্রুতই সুস্থ হওয়া সম্ভব।" 

(ব্র্যাক)